আওয়ামীলীগ এবং চেতনা
২৪ বছরের পাকিস্তানের অবহেলা,শোষণ ও বৈষম্য থেকে বের হওয়ার জন্য আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ যে চেতনাকে ধারণ করে সংঘটিত হয়েছিল ,সেটি ছিল সাম্য গণতন্ত্র সমাজতন্ত্র ধর্ম নিরপেক্ষতা এবং সর্বোপুরি একটি ন্যায় ভিত্তিক শোষণহীন শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলা। কোনো ব্যক্তিগত মত বাদ কিংবা একক কোন ব্যক্তির নেতৃত্বের বদলে গণতান্ত্রিক-সমাজতান্ত্রিক একটি আদর্শিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাকরা।কিন্তু স্বাধীনতার পর পরই আমাদের সেই চেতনা একে একে হুঁচোট খেতে থাকে স্বয়ং শেখ মুজিব এবং তাদের দল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কাছ থেকে। সেই চেতনা কে তারা প্রায় ধ্বংস করেই দিয়েছেন বলা যায়। নীচে ধারাবাহিক ভাবে তা' তুলে ধরা হলো:
0১.
সূত্র: বাংলাদেশে কম্যুনিষ্ট আন্দোলন: আবু জাফর মোস্তফা সাদেক পৃ: ৫৭
0২.
বাংলাদেশ স্বাধীন করার মূল মন্ত্র বা চেতনা ছিল পাকিস্তানীদের শোষণ থেকে মুক্তি, বৈষম্যহীন অর্থনৈতিক মুক্তি, সাম্য, সকলের সমান অধিকার, কথা বলার অধিকার ও গণতান্ত্রিক মতবাদের ভিত্তিতে দেশ পরিচালনা করা। কিন্তু মুক্তি যুদ্ধের এই চেতনা প্রথম ধাক্কা খায় শেখ মুজিবের তথা আওয়ামীলীগের কাছ থেকে। তারা গণতন্ত্রের বদলে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পরই প্রতিষ্ঠা করতে চাইলেন “মুজিববাদ” অর্থাৎ মুজিবের শাসন।
শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারী দেশে ফিরে আসার দিনই আওয়ামীলীগারা গনতন্তের বদলে মুজিববাদ প্রতিষ্ঠার শপথ নিলো। ২৭ জানুয়ারী ১৯৭৫ সালে The New York Times এ এভাবেই প্রতিবেদনটি ছাপা হয়:
The New York Times, 1975-01-27
Thousands of voices chanted in Bengali: “A new nation has come upon the earth — Bangladesh! Bangladesh! A new ism has come to the world — Mujibism Mujibism!”
অর্থাৎ কয়েক হাজার কণ্ঠ বাংলায় উচ্চারণ করেছিল: “পৃথিবীতে একটি নতুন জাতি এসেছে – বাংলাদেশ!
বাংলাদেশ! বিশ্বে একটি নতুন “ইসম” (মতবাদ) এসেছে – মুজিববাদ, মুজিববাদ! “
0৩.
পরবর্তীতে,
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র ১৯ দিনের মাথায় অর্থাৎ ৪ জানুয়ারী ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ২৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক বিরাট সুধী সমাবেশে বক্তৃতা কালে ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্ধ ঘোষণা করেন যে স্বাধীনতা সংগ্রাম “মুজিববাদ” সংগ্রামে রূপান্তরিত হয়েছে।
অথচ এই স্বাধীনতা সংগ্রাম এর মূল চেতনাই ছিল সাম্যবাদ ও গণতন্ত্র। কাজেই আওমীলীগ-ই মুক্তি যুদ্ধের চেতনায় প্রথম আঘাত হানে। ছাত্রলীগের এই ঘোষণা পরেরদিন অর্থাৎ ৫ জানুয়ারী ১৯৭২ ‘দৈনিক আজাদ’ পত্রিকায় ফলাও করে প্রচারিত হয়।
> ০৫/০১/১৯৭২ সালে আওয়ামী ভাইয়েরা “মুজিববাদ” প্রতিষ্ঠা দিবস পালন করে ছাত্র গণ-জমায়েত এর মধ্য দিয়ে । তারা আবারো দৃঢ়কণ্ঠে ঘোষণা করেন “মুজিববাদই এ দেশের মানুষের মুক্তির সনদ” । ‘দৈনিক আজাদ’ পত্রিকায় ৫ ও ৬ জানুয়ারী ১৯৭২ সালে তা প্রচারিত হয়
> ০৪/০২/১৯৭২ (দৈনিক আজাদ): পররাষ্ট্র মন্ত্রী জনাব আব্দুস সামাদ আজাদ সিলেটে জেলা আওয়ামীলীগ কর্মীদের এক সম্মেলনে ট্যাকনিকেল ইনস্টিটিউট বলেছেন জনগণের মুক্তির জন্য “মুজিববাদ” কায়েম করতেই হবে।
> ১৩/০২/১৯৭২ (দৈনিক আজাদ): আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতা, জাতীয় শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও গণপরিষদ সদস্য জনাব আব্দুল মান্নান বলেছেন এই দেশের মানুষের মুক্তির জন্য দেশে অবশ্যই মুজিববাদ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
> ০৭/০৬/১৯৭২: শেখ মুজিব নিজেই মুজিববাদ ঘোষণা দেন
> ০২/০৮/১৯৭২: আওয়ামীলীগের সভায় মুজিববাদ প্রতিষ্টার শপথ গ্রহণ করা হয়
‘মুজিববাদ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে’ গড়ে উঠতে থাকলো একের পর এক বেসামরিক লাঠিয়াল বাহিনী, আওয়ামী সেচ্ছাসেবক বাহিনী, জয় বাংলা বাহিনী, লাল বাহিনী এমনি বহু। আর আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নাকের ডগায় এইসব উচ্ছঙ্খল বাহিনী দৌর্দন্ড প্রতাপে চালাতে থাকলো হয়রানি এবং নির্যাতন।যাকে তাকে যখন তখন দিতে থাকলো হুমকি।
সূত্র কথামালার রাজনীতি, রেজওয়ান সিদ্দিকী পৃ:৪
> ২৭/০৯/১৯৭২: সাপ্তাহিক হক কথা, মুখপত্র ও স্পোকম্যান নিষিদ্ধ করে দিয়ে শেখ মুজিব বাক স্বাধীনতায় হানা দেন
> ১১/০৮/১৯৭৩: চিটাগাং এ দেশ বাংলা অফিস এ তালা ও ১০ জন কে গ্রেফতার করে শেখ মুজিব বাক স্বাধীনতায় হানা দেন
> ০৫/০২/১৯৭৪: সংসদে বিশেষ ক্ষমতা আইন ৭৪ উপস্থাপন করে মানুষের মৌলিক অধিকার কেড়ে নেন শেখ মুজিব
> ২৫/০১/১৯৭৫: শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ জাতীয় সংসদে বাংলাদেশের সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী আনে। এই সংশোধনীতে বাংলাদেশে আওয়ামীলীগ সহ সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় এবং কেবলমাত্র আওয়ামীলীগের তোষামোদ করে এমন ৪টি পত্রিকা রেখে বাকি সকল পত্রিকা বন্ধ করে দিয়ে মুক্তি যুদ্ধের চেতনায় বিরাট আঘাত হেনেছিলেন