দেশ নায়ক তারেক জিয়া

তারেক রহমান (তারেক জিয়া নামেও পরিচিত) ২০ নভেম্বর ১৯৬৭ সালে ঢাকায় জন্ম গ্রহণ করেন। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারী মাস থেকে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।

তিনি একটি উল্লেখযোগ্য, স্বনামধন্য ও অভিজাত রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক বাড়ী বগুড়া জেলার গাবতলী উপজেলার বাগবাড়ী গ্রামে। তাঁর পিতা জিয়াউর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক ও ১ম রাষ্ট্রপতি এবং মাতা বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন বাংলাদেশের ১০ম প্রধানমন্ত্রী এবং প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী। তাঁর পিতামহ মরহুম মনসুর রহমান কলকাতায় সরকারী চাকরী করতেন যিনি কাগজ ও কালি রসায়নে বিশেষজ্ঞ ছিলেন এবং পিতামহী জাহানারা খাতুন ছিলেন একজন গৃহিনী। 

তিনি বিএএফ  শাহীন স্কুল থেকে এস এস সি,  ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে পড়াশুনা করেছেন। তাঁর স্ত্রী, ডঃ জুবাইদা রহমান একজন প্রখ্যাত চিকিৎসক এবং শশুর ছিলেন সিলেটের একজন কৃতি মানুষ, সাবেক নৌ বাহিনীর প্রধান ও সাবেক মন্ত্রী রিয়ার এডমিরাল মাহবুব আলী খান। তিনি এক কন্যা সন্তানের জনক। তার কন্যা জাইমা রহমান বিলাতে একজন প্রাক্টিসিং ব্যারিস্টার ।

তারেক রহমান ১৯৮৮ সালে বগুড়া জেলার গাবতলী উপজেলা বিএনপির প্রাথমিক সদস্য হিসেবে তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় তিনি সক্রিয়ভাবে দলের পক্ষে সমর্থন জোগাড় করতে নিরলস কাজ করে গেছেন। সেই সময়কালে তিনি সক্রিয়ভাবে বগুড়ার বিএনপি ইউনিটগুলিকে সংগঠিত করেন এবং রাজনীতিকে আরও উৎপাদন ও উন্নয়নমুখী করতে সহজাত রাজনৈতিক  সংস্কৃতির পরিবর্তন করেন। উন্মুক্ত কাউন্সিলের মাধ্যমে নেতা নির্বাচনের জন্য তিনি বগুড়ায় গোপন ব্যালট পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করেন।

১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সাফল্য এবং নতুন সরকার গঠনের পর তারেক রহমানকে তাঁর অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে দলের সিনিয়র পদে অধিষ্টিত হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তবে তৃণমূল পর্যায়ে দলকে শক্তিশালী করতে পর্যাপ্ত সময় দেবার জন্য তিনি উচ্চ পদে আসীন হতে অনীহা প্রকাশ করেন। ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় দলের তৃণমূল এবং সিনিয়র নেতৃত্ব তারেক রহমানকে বগুড়া থেকে একটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন।  কিন্তু তিনি তৃণমূল পর্যায়ে তাঁর কাজকে আরও এগিয়ে নেওয়ার এবং তাঁর মাতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্য নির্বাচনী প্রচারণার সমন্বয়ের লক্ষ্যে সেই প্রস্তাবও প্রত্যাখ্যান করেন।

১৯৯৬ – ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে তারেক রহমান সরকারের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন। তিনি সক্রীয়ভাবে অর্থনৈতিক বঞ্চনার সমস্যা মোকাবেলার জন্য প্রচারণা চালান এবং গ্রামীণ এলাকায় বসবাসকারী মানুষের দুর্দশার কথা প্রচারের লক্ষ্যে দেশব্যাপী পরামর্শ কার্যক্রম শুরু করেন। এই ধরণের বৃহৎ পরিসরের কর্মসূচী অর্থাৎ সরকারের বিরুদ্ধে গণসংহতি গড়ে তোলা বাংলাদেশের ইতিহাসে ছিল প্রথম যার ফলস্বরূপ বিএনপিকে ২০০১ সালে  ক্ষমতায় ফেরাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। ২০০১ সালের অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটি দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ব্যাপক বিজয় লাভ করে।

২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারী মঈনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনের নেতৃত্বে বাংলাদেশে একটি মিলিটারি সহায়ক অবৈধ সরকার গঠিত হলে ৭ মার্চ তাঁকে তার ক্যান্টনমেন্টের বাসা থেকে মিলিটারিরা তুলে নিয়ে যায় এবং অনেক অত্যাচারের পর তাঁকে ছেড়ে দিলেও অত্যাচারের মাত্রা এমন ছিল যে তাকে স্ট্রেচারে করে লন্ডনে চিকিৎসার জন্য ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ত্যাগ করতে হয়েছিল এবং সেই সময় থেকেই তিনি স্বপরিবারে লন্ডনে বসবাস করছেন। চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরতে চাইলেও আওয়ামীলীগ সরকার তাঁকে একে একে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা দিয়ে দেশে আসার প্রতিবন্ধকতা তৈরী করছে। এবং  তিনি তাঁর রাজনৈতিক ভীষণ, রাজনীতির গতিধারা এবং বাংলাদেশের রাজনীতির প্রেক্ষাপট নিয়ে বাংলা ও ইংরেজীতে কিছু বই লিখেছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, “Political thoughts of Tarique Rahman” এবং “জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট ও স্বাধীনতার ঘোষক” 

তাসলিমা আবেদ 

তসলিমা আবেদ ছিলেন একজন নারী অধিকার কর্মী এবং রাজনীতিবিদ।

তিনি কেন্দ্রীয় মহিলা পুনর্বাসন সংঘের প্রতিষ্ঠাতা কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। এটি ছিল ধর্ষণের শিকার নারীদের পুনর্বাসন কর্মসূচি নিয়ে কাজ করার জন্য একটি ফাউন্ডেশন। ১৯৭৪  সালে বাংলাদেশ সরকার ফাউন্ডেশনের নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ নারী পুনর্বাসন ও কল্যাণ ফাউন্ডেশন নাম প্রদান করে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাথে সংযুক্ত করা হয়।

১৯৮০ সালে তিনি মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং একই বছর জুলাই মাসে কোপেনহেগেনে নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য দূরীকরণের কনভেনশনে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন।

মোহাম্মদ ইউসুফ আলী

মোহাম্মদ ইউসুফ আলী ১৯২৩ সালে দিনাজপুরের ফরক্কাবাদে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৪৪ সালে দিনাজপুর একাডেমি হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং রিপন কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দেন। তিনি সুরেন্দ্রনাথ কলেজ থেকে স্নাতক এবং ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। পরে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ল’ ডিগ্রি অর্জন করেন এবং দিনাজপুর জেলা বারে যোগ দেন।

মোহাম্মদ ইউসুফ আলী নবাবগঞ্জ কলেজ এবং পরে সুরেন্দ্রনাথ কলেজের অধ্যাপক ছিলেন। তিনি ১৯৬২ সালে পূর্ব পাকিস্তান আইনসভার সদস্য এবং ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মোহাম্মদ ইউসুফ আলী ভারতে চলে যান। পরবর্তীতে তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের মন্ত্রিসভার প্রথম শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী এবং গণপরিষদের (বাংলাদেশের অস্থায়ী সংসদ) স্পিকার ছিলেন।  শেখ মুজিবুর রহমান তাকে বাকশালের শ্রমিক লীগের চেয়ারম্যান করেন। ১৯৭৫ সালে তিনি বাকশালে শ্রমমন্ত্রী ছিলেন কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর তিনি খন্দকার মোশতাক আহমেদ সরকারে যোগ দেন এবং পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৭৭ সালে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের (মিজান চৌধুরী অংশে) মহাসচিব ছিলেন এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে (বিএনপি) যোগ দেন। ১৯৭৯ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মন্ত্রিসভায় বস্ত্রমন্ত্রী এবং ১৯৮১ সালে বিচারপতি আবদুস সাত্তার মন্ত্রিসভায় পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী ছিলেন। তিনি ১৯৮৫ সালে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন এবং ১৯৮৬ সালে রাষ্ট্রপতি এরশাদের অধীনে ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মোহাম্মদ ইউসুফ আলী ১৯৯৮ সালের ডিসেম্বরে ইন্তেকাল ।

আব্দুল হক 

আবদুল হক দিনাজপুর জেলার রাজনীতিবিদ। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭৩ সালের সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে দিনাজপুর-৫ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

সিরাজুল ইসলাম

সিরাজুল ইসলাম ১৯৪৪ সালে জন্ম গ্রহণ করেন এবং ১৯৯৬ সালের জুন মাসে ইন্তেকাল করেন। তিনি ১৯৭৩ ও ১৯৭৯ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে দিনাজপুর-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তাছাড়া ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে পঞ্চগড়-১ আসন থেকেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

সিরাজুল আলম খান একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক, দার্শনিক এবং লেখক। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী একটি গোপন সংগঠন, “স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ” এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা।   

জাসদ:

১৯৭২ সালের অগাস্ট মাসে জনাব সিরাজুল আলম খানের নেতৃত্বে মেজর জলিল, আ.স.ম আব্দুর রব এবং শাহজাহান সিরাজ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গঠন করেন। শেখ মুজিব সরকারের বিরুদ্ধে “গণবাহিনী” নামে জাসদের একটি বিপ্লবী সশস্ত্র বিভাগ ছিল। কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে এই গণবাহিনীতে ছিলেন হাসানুল হক ইনু, কাজী আরেফ আহমেদ, মনিরুল ইসলাম ও শরীফ নুরুল আম্বিয়া। জাসদের প্রধান উদ্দেশ্য সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা  করা।

বাংলাদেশ জাতীয় লীগ:

১৯৬৮ সালের ২০ জুলাই জনাব আতাউর রহমান খান বাংলাদেশ জাতীয় লীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং ১৯৮৪ সালে তিনিই দলটির অবসান ঘটান। জনাব আতাউর রহমান খান ছিলেন একজন আইনজীবী, রাজনীতিবিদ ও লেখক।  তিনি  সেপ্টেম্বর ১৯৫৬ সাল থেকে  মার্চ ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত অবিভক্ত পাকিস্তানের পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) মুখ্য মন্ত্রী ছিলেন। তাছাড়া তিনি ৩০ মার্চ ১৯৮৪ সাল থেকে ৯ জুলাই ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট এরশাদ এর শাসনামলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ৭ ডিসেম্বর ১৯৯১ সালে ৮৬ বছর বয়সে তিনি ঢাকায় ইন্তেকাল করেন।