স্বাধীনতার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ দীর্ঘ নয় মাসের একটি সংগ্রাম।  এই সংগ্রামকে লিপিবদ্ধ করতে হলে কয়েকটি বই লিখার প্রয়োজন রয়েছে। আমরা এই পোর্টালে কেবল আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু থেকে ২৬শে মার্চ শহীদ জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণা পর্যন্ত একটি প্রেক্ষাপট বর্ণনা করেছি মাত্র। এটির কারণ হচ্ছে পাঠকদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের একটা ফাউন্ডেশন তৈরী করে দেয়া, যাতে করে পাঠকরা আমাদের নয় মাসের সংগ্রামের ইতিহাস পড়তে কোনো রকম কনফিউসড না হয়ে সংক্ষিপ্ত ও স্বচ্ছ ধারণা নিয়ে বিস্তারিতভাবে সঠিক বই পড়ে আমাদের সংগ্রামের ইতিহাসকে জানতে পারেন।

তাসলিমা আবেদ 

তসলিমা আবেদ ছিলেন একজন নারী অধিকার কর্মী এবং রাজনীতিবিদ।

তিনি কেন্দ্রীয় মহিলা পুনর্বাসন সংঘের প্রতিষ্ঠাতা কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। এটি ছিল ধর্ষণের শিকার নারীদের পুনর্বাসন কর্মসূচি নিয়ে কাজ করার জন্য একটি ফাউন্ডেশন। ১৯৭৪  সালে বাংলাদেশ সরকার ফাউন্ডেশনের নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ নারী পুনর্বাসন ও কল্যাণ ফাউন্ডেশন নাম প্রদান করে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাথে সংযুক্ত করা হয়।

১৯৮০ সালে তিনি মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং একই বছর জুলাই মাসে কোপেনহেগেনে নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য দূরীকরণের কনভেনশনে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন।

মোহাম্মদ ইউসুফ আলী

মোহাম্মদ ইউসুফ আলী ১৯২৩ সালে দিনাজপুরের ফরক্কাবাদে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৪৪ সালে দিনাজপুর একাডেমি হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং রিপন কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দেন। তিনি সুরেন্দ্রনাথ কলেজ থেকে স্নাতক এবং ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। পরে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ল’ ডিগ্রি অর্জন করেন এবং দিনাজপুর জেলা বারে যোগ দেন।

মোহাম্মদ ইউসুফ আলী নবাবগঞ্জ কলেজ এবং পরে সুরেন্দ্রনাথ কলেজের অধ্যাপক ছিলেন। তিনি ১৯৬২ সালে পূর্ব পাকিস্তান আইনসভার সদস্য এবং ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মোহাম্মদ ইউসুফ আলী ভারতে চলে যান। পরবর্তীতে তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের মন্ত্রিসভার প্রথম শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী এবং গণপরিষদের (বাংলাদেশের অস্থায়ী সংসদ) স্পিকার ছিলেন।  শেখ মুজিবুর রহমান তাকে বাকশালের শ্রমিক লীগের চেয়ারম্যান করেন। ১৯৭৫ সালে তিনি বাকশালে শ্রমমন্ত্রী ছিলেন কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর তিনি খন্দকার মোশতাক আহমেদ সরকারে যোগ দেন এবং পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৭৭ সালে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের (মিজান চৌধুরী অংশে) মহাসচিব ছিলেন এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে (বিএনপি) যোগ দেন। ১৯৭৯ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মন্ত্রিসভায় বস্ত্রমন্ত্রী এবং ১৯৮১ সালে বিচারপতি আবদুস সাত্তার মন্ত্রিসভায় পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী ছিলেন। তিনি ১৯৮৫ সালে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন এবং ১৯৮৬ সালে রাষ্ট্রপতি এরশাদের অধীনে ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মোহাম্মদ ইউসুফ আলী ১৯৯৮ সালের ডিসেম্বরে ইন্তেকাল ।

আব্দুল হক 

আবদুল হক দিনাজপুর জেলার রাজনীতিবিদ। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭৩ সালের সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে দিনাজপুর-৫ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

সিরাজুল ইসলাম

সিরাজুল ইসলাম ১৯৪৪ সালে জন্ম গ্রহণ করেন এবং ১৯৯৬ সালের জুন মাসে ইন্তেকাল করেন। তিনি ১৯৭৩ ও ১৯৭৯ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে দিনাজপুর-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তাছাড়া ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে পঞ্চগড়-১ আসন থেকেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

সিরাজুল আলম খান একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক, দার্শনিক এবং লেখক। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী একটি গোপন সংগঠন, “স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ” এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা।   

জাসদ:

১৯৭২ সালের অগাস্ট মাসে জনাব সিরাজুল আলম খানের নেতৃত্বে মেজর জলিল, আ.স.ম আব্দুর রব এবং শাহজাহান সিরাজ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গঠন করেন। শেখ মুজিব সরকারের বিরুদ্ধে “গণবাহিনী” নামে জাসদের একটি বিপ্লবী সশস্ত্র বিভাগ ছিল। কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে এই গণবাহিনীতে ছিলেন হাসানুল হক ইনু, কাজী আরেফ আহমেদ, মনিরুল ইসলাম ও শরীফ নুরুল আম্বিয়া। জাসদের প্রধান উদ্দেশ্য সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা  করা।

বাংলাদেশ জাতীয় লীগ:

১৯৬৮ সালের ২০ জুলাই জনাব আতাউর রহমান খান বাংলাদেশ জাতীয় লীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং ১৯৮৪ সালে তিনিই দলটির অবসান ঘটান। জনাব আতাউর রহমান খান ছিলেন একজন আইনজীবী, রাজনীতিবিদ ও লেখক।  তিনি  সেপ্টেম্বর ১৯৫৬ সাল থেকে  মার্চ ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত অবিভক্ত পাকিস্তানের পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) মুখ্য মন্ত্রী ছিলেন। তাছাড়া তিনি ৩০ মার্চ ১৯৮৪ সাল থেকে ৯ জুলাই ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট এরশাদ এর শাসনামলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ৭ ডিসেম্বর ১৯৯১ সালে ৮৬ বছর বয়সে তিনি ঢাকায় ইন্তেকাল করেন।